ডাক্তারদের জন্য ঔষধ কোম্পানি থেকে খাবার, গিফট ইত্যাদি গ্রহণ করা কেমন?

আমরা দেখে থাকি সাধারণত ঔষধ কোম্পানিগুলো ডাক্তারদেরকে দু’ধরণের গিফট দিয়ে থাকে।

১ খাবার-দাবার, ছাতা, এসি-ফ্রি সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা জিনিস পত্র ।

২ ডাক্তারি পেশার সাথে সম্পৃক্ত বস্তু৷ যেমন ঔষধ, কলম ইত্যাদি

#প্রথম প্রকারের গিফট বিষয় আলোচনাঃ

শায়েখ মুনাজ্জিদ (ফাঃআঃ) লিখেছেন, ডাক্তারদের জন্য ঔষধ কোম্পানি থেকে খাবার বা অন্য যেকোন হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েজ নেই। কারণ হিসাবে তিনি লিখেছেন,
ولأن هذه الهدايا تؤدي إلى استمالة القلب إلى المهدي وتقديمه على غيره، وذلك له أثر في اختيار الطبيب للدواء، واختيار المستشفى لشركة الأدوية، فالواجب سد هذا الباب

“কেননা, এসব হাদিয়া হাদিয়াদাতার প্রতি মনকে ঝুঁকিয়ে দেয় এবং তাকে অন্যদের উপর প্রাধান্য প্রদান করতে (বাধ্য করে)। এতে করে ডাক্তারের মনে ও কাজে ঔষধ কোম্পানির ঔষধ ও তাদের হাসপাতালের নাম গ্রহণ করার ব্যাপারে প্রভাব পড়ে। সুতরাং এসব (এসব কাজের মাধ্যে খেয়ানত ও পক্ষপাতিত্ব অন্যায়ের ) দরজা বন্ধ করে দেওয়া ওয়াজিব। ”

(ইসলামি কিউঃ ২৬৬৩৭৭)

তিনি প্রমাণ হিসাবে দু’টি হাদিস পেশ করেন।

ক-
عن أبي حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ رضي الله عنه قَالَ: ” اسْتَعْمَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلا مِنْ بَنِي أَسْدٍ يُقَالُ لَهُ ابن اللُّتْبِيَّة عَلَى صَدَقَةٍ فَلَمَّا قَدِمَ قَالَ: هَذَا لَكُمْ وَهَذَا أُهْدِيَ لِي، فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ: مَا بَالُ الْعَامِلِ نَبْعَثُهُ فَيَأْتِي يَقُولُ: هَذَا لَكَ وَهَذَا لِي، فَهَلا جَلَسَ فِي بَيْتِ أَبِيهِ وَأُمِّهِ فَيَنْظُرُ أَيُهْدَى لَهُ أَمْ لا؟ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لا يَأْتِي بِشَيْءٍ إِلا جَاءَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَحْمِلُهُ عَلَى رَقَبَتِهِ، إِنْ كَانَ بَعِيرًا لَهُ رُغَاءٌ، أَوْ بَقَرَةً لَهَا خُوَارٌ، أَوْ شَاةً تَيْعَرُ، ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى رَأَيْنَا عُفْرَتَيْ إِبْطَيْهِ: أَلا هَلْ بَلَّغْتُ، ثَلاثًا ”

“আবু হুমাই সাঈদী (রাদি) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নবী (সা) বনী আসাদ গোত্রের ইবনে লুতাবিয়্যা নামক জনৈক ব্যক্তিকে জাকাত আদায়ের জন্য কর্মচারী বানালেন। সে যখন ফিরে আসল, তখন বলল, এগুলো আপনাদের। আর এগুলো আমাকে হাদিয়া দেওয়া হয়েছে। এ কথা শোনার পর নবী (সা) মিম্বারের উপর দাঁড়ালেন। আল্লাহর হামদ ও সানা বর্ণনা করলেন। এরপর বললেন, কর্মকর্তাদের কি হল! আমি তাকে প্রেরণ করি, অতপর সে ফিরে এসে বলল, এগুলো আপনার আর এগুলো আমার। সে তার বাপের বাড়ি কিংবা মায়ের বাড়ি বসে থেকে দেখত যে, তাকে হাদিয়া দেওয়া হয় কিনা? ————। ”

(সহিহ বুখারিঃ ৭১৭৪, সহিহ মুসলিমঃ ১৮৩২ )

খ-
أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: هدايا العمال غلول

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কর্মীদের জন্য হাদিয়া গ্রহণ করা গুলুল বা খিয়ানত। ”
(সহিহুল জা’মিঃ ৭০২১)

সৌদির প্রসিদ্ধ ফাতাওয়া বোর্ড “লাজনাতুদ দায়েমা” তে এই বিষয়ে বিস্তারিত প্রশ্ন করা হলে তারা উত্তর দেন,

لا يجوز للطبيب أن يقبل الهدايا من شركات الأدوية؛ لأن ذلك رشوة محرمة، ولو سميت بهدية أو غير ذلك من الأسماء؛ لأن الأسماء لا تغير الحقائق؛ ولأن هذه الهدايا تحمله على الحيف مع الشركة التي تهدي إليه دون غيرها، وذلك يضر بالشركات الأخرى

“ডাক্তারদের জন্য ঔষধ কোম্পানি থেকে হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েজ নয়। কেননা, এটা (এক প্রকার) নিষিদ্ধ ঘুষ। যদিও একে হাদিয়া বা অন্য নাম দিয়ে থাকে। কেননা, নাম কোন জিনিসের প্রকৃত অবস্থা পরিবর্তন করতে পারে না। যেহেতু এসব হাদিয়া ডাক্তারকে- যে কোম্পানিগুলো হাদিয়া দেয়নি- তাদের সাথে অন্যায় করতে উদ্বুদ্ধ করে। যা অন্যদের জন্য ক্ষতি কারণ হয়। ”

(ফাতাওয়ে লাজনাতিদ দায়েমা -২৩/৫৭০-৫৭১)

একটি প্রশ্ন ও উত্তর ঃ

কেউ বলতে পারে, আমি হাদিয়া গ্রহণ করা সত্বেও ভাল ঔষধ ও ভাল কোম্পানির নাম লিখি। তাহলে আমার জন্যও কি একি হুকুম?

ইসলামি ওয়েব এই প্রশ্নের উত্তরে লিখেছেন,

فإن سلم من ذلك فالمصلحة تقتضي سد ذلك الباب أيضا، لئلا يكون سببا لغش المرضى والطمع والجشع والفساد،
“যদি সে এসব অন্যায় থেকে মুক্ত হয়, তবু্ও মাসলেহাত বা কল্যাণকর দিকটির দাবি হল এই পথটিও বন্ধ করে দেওয়া। যাতে করে রুগী প্রতারিত না হয়, এবং লোভ-লালসা সহ ফাসাদের দুয়ার বন্ধ হয়ে যায়। ”

(ইসলামি ওয়াবেঃ ২৮২৩০৪ )

#দ্বিতীয় নং হাদিয়ার আলোচনা ঃ

২ ডাক্তারি পেশার সাথে সম্পৃক্ত, যেমন কলম, প্যাড ইত্যাদি হাদিয়া দেওয়া

ইসলামি ওয়েবে এই প্রশ্নের জবাবে লিখেছেন,

وأما دعوة الأطباء لتعريفهم على الجديد في الأدوية أوتوزيع مذكرات وأقلام ونحو ذلك مما هو معتاد ولا يقصد به التأثير على الطبيب وكسب وده بمحاباته لفاعل ذلك دون غيره: فلا يدخل في الرشوة المحرمة، لأنها هي ما يتوصل به المرء إلى إحقاق باطل أو إبطال حق أو أخذ ما ليس له
“অতপর ডাক্তারদেরকে নতুন ঔষধের ব্যাপারে জানানোর জন্য ঔষধ দেওয়া,নোটবুক , কলম ইত্যাদি দেওয়া-যা সাধারণ বিষয় – এবং যা দ্বারা ডাক্তারদের উপর প্রভাব বিস্তার করা হয় না এবং যা দ্বারা অন্যদের থেকে ফিরিয়ে রেখে কেবল (হাদিয়াদাতা) তাদেরকে ভালোবাসাতে বা ঝুঁকতে হয় না, তা হারাম ঘুষ এর হুকুমে পড়বে না। কেননা, ঘুষ দ্বারা তো বাতিল জিনিসকে হক দেওয়া হয় অথবা হককে বাতিল করা হয় বা যা তার জন্য বৈধ না তা গ্রহণ করা হয়। ”

(ইসলামি ওয়েবঃ ২৮২৩০৪ )

উত্তর প্রদানে
মুফতি আব্দুর রহমান
উস্তাদ, র‍্যামফিট

Leave a Comment

Shopping Cart